কুমিল্লার যে অঞ্চল থেকে প্রথম যুদ্ধ শুরু ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয়

৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে কুমিল্লা পাক হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ আর নির্যাতনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীসহ সর্বস্তরের জনগণের উল্লাস ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে এই অঞ্চল।

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল জানান, ৭ ডিসেম্বর রাতে মিত্রবাহিনীর ৬১ ব্রিগেডের একটি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে.কর্নেল মাহেন্দ্রপাল সিং, বাংলাদেশের মেজর আইন উদ্দিন, ক্যাপ্টেন আশরাফ, লে. হারুন ও মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান বুলবুল, মো. শাহ আলম ও সফিউল আহমেদ বাবুলদের নেতৃত্বে বিমান বন্দরের পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। রাতের মধ্যে বিমান বন্দরের পাক হানাদার সেনাদের সাথে যৌথ বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে পাক হানাদার সেনাদের প্রধান ঘাঁটির পতন হয়। অনেক পাক হানাদার সেনা নিহত হন। নির্যাতিত অনেকে এসে তাদের লাশের মুখে থু-থু ছিটায়। বিমান বন্দরের ঘাঁটিতে কিছু পাক হানাদার সেনা আত্মসমর্পণ করে। কিছু সেনা বিমান বন্দরের ঘাঁটি ত্যাগ করে শেষ রাতে বরুড়ার দিকে এবং সেনানিবাসে ফিরে যায়।

এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধের ২ নং সেক্টর ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কোটেশ^র গ্রাম। যে গ্রাম থেকে প্রথম মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এ গ্রামেই অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পতাকা উত্তোলন হয়। এ গ্রামের সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধা এ.এন.এম ওয়াহিদুর রহমান। যার তত্ববধানে ওই এলাকার তৎকালীন ইপিআর বর্তমানে বিজিবি বড়জলা ক্যাম্প ও পাশ্ববর্তী খারেরা, শংকুচাইলসহ অন্যান্য ক্যাম্পগুলোতে অবস্থারত পাকিস্থানী দখলদার শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় কোটেশ^র গ্রামকে নিরাপদ মনে করেন মুক্তিকামী বাঙ্গালি ও ইপিআর সদস্যরা। ২৭ মার্চ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কোটেশ^রে জড়ো হতে থাকে। ২৮ মার্চ পযার্য়ক্রমে মুক্তিকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাসহ শত শত ছাত্র জনতা একত্র হন। যুদ্ধ করেন। মুক্তিকামী বাঙ্গালীরা পাশ্ববর্তী ভারতের সোনামূড়ায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা গোমতীনদীর উত্তরাঞ্চল শত্রুমুক্ত হয়।

৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা পাক হানাদার সেনা মুক্ত হয়। এদিন ভোরে মুক্তি সেনারা শহরের চকবাজার টমছমব্রিজ ও গোমতী পাড়ের ভাটপাড়া দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে শহরে প্রবেশ করে। তখন রাস্তায় জনতার ঢল নামে। কুমিল্লার জনগণ সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে নেন। পরে এদিন বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনী ও জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তৎকালীন পশ্চিম পূর্বাঞ্চলের প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী দলীয় পতাকা এবং কুমিল্লার প্রথম প্রশাসক অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ।

     আরো দেখুন:

পুরাতন খবর

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  

You cannot copy content of this page